somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক~৩য় পর্ব (তৃতীয় খন্ড)

২১ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
ভীর রাত অব্দি খাওয়া-দাওয়া নাচ-গান আর গল্প-গুজব করে ঘুমোতে ভোর হয়ে গেল। সকাল দশটার দিকে ঘুম ভাঙ্গল ববির হুড়োহুড়িতে। ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখি সারা বাড়ির অন্য রূপ। বিয়ে বাড়িতে চারিদিকে রঙের রোশনাই কিন্তু পোশাকের রঙ উধাও। মহিলা-পুরুষের পোশাক দেখে মনে হচ্ছে সবাই এক কাতারে জামাতে নামাজ পড়বে।কেমন একটা ধর্মীয় কিন্তু উচ্ছল পরিবেশ।
ববি আমাকে বলল তাড়াতাড়ি গোসল সেরে পাঞ্জাবী পড়ে নিতে!! কাহিনী কি দোস্ত?
-ও একটা ফিচেল হাসি দিয়ে বলল; কাহিনী যেইটাই হোক তার মধ্যমণি তুই। তাড়াতাড়ি রেডি হ।
-আমারতো পাঞ্জবি নেই।
-সমস্যা নাই আমারটা পর।
ওর ছোট বোনকে হাতের নাগালে পেয়ে ধরলাম- এই ব্যাপার কি বলতো?
সে ভীষণ অবাক হয়ে বড় একটা হা করে মুখে হাত দিয়ে বলল; ও মা আপনি জানেননা ভাইয়া! তাহলে থাক-পরে শুরু হলে জানবেন। বলে ফিচ করে হেসে চলে গেল।
বেশ টেনশন নিয়ে গোসল সেরে পাঞ্জাবি পড়ে বের হয়ে দেখি বেশ সুফি টাইপের এক হুজুর এসেছেন ; তার সাথে জনা পাঁচেক সাগরেদ। ঘটনা কি বিয়ে কি এবেলাতেই পড়িয়ে নিবে?
হতে পারে, ববি’রতো মতি-গতি ঠিক নেই মাঝপথে ভেগে যেতে পারে! ড্রইং রুমে প্রবেশ করে দেখি বেশ আত্মীয় স্বজনের ভিড়- সবার মাঝে ভীষণ চাঞ্চল্য। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব ঠিক তক্ষুনি ববির দু’দন বেশ পর্দা-শীল আত্মীয়া এলিনাকে নিয়ে প্রবেশ করছে। এলিনার গেয়ে সিল্কের সাদা সালোয়ার কামিজ আর মাথায় বেশ কায়দা করে সুখ সাদায় কারুকাজ করা ওড়নায় মোড়া। এই সাজে কি সুন্দর লাগছে ওকে- মনে হচ্ছে সাদা পরী! উপস্থিত সবাই মুগ্ধ নয়নে হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
ঘটনা কি ও কি এই পোষাকে বিয়ে করবে?
পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে হেসে বলল, ভাইয়া ও মুসলমান হবে আগে নাইলে বিয়ে হবে ক্যামনে?
আমি ভীষণ টাসকি খাইলাম। আসলেই-তো আমার মাথায় আসেনি পারিবারিক-ভাবে ধর্ম-মতে বিয়ে হতে হলে ওকে ধর্মান্তরিত হতে হবে। এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে গেলে তাকে ধর্মান্তরিত বলে কিন্তু যার কোন ধর্ম নাই তার নতুন কোন ধর্ম গ্রহণ করাকে কি বলে? –বাংলা এমন দুরূহ একটা শব্দ খুঁজতে খুঁজতে আমার ডাক পড়ল।
ববি জোড়ে-সোরে ডাকল; সৌম্য এদিকে আয় ওইখানে কি করিস?
এলিনার বসতে বেশ কসরত করতে হয়েছে। মেঝেতে বসার অভ্যাস এদের নেই।এপাশে মেয়েদের সারি- ওপাশে পুরুষদের। মাঝখানে দুজনে একটা পর্দা ধরে আছে। পর্দার আড়াআড়ি জায়গার মাঝে আমি আসন গেড়ে বসে আছি। হুজুরে কলমা পড়াবেন আর আমি এলিনাকে বুঝিয়ে দিব। ওর ভুল-ভাল হলে ঠিক করে দিব। অনেকটা আমার হাতে সে বাইয়্যাত গ্রহণ করবে।
কি এক দিগদারী- এরকম কাজ কস্মিনকালে আমিতো দুরের কথা আমার চৌদ্দ গুষ্টির কেউ করেছে কিনা সন্দেহ আছে। এর পরে আমি নিজেই সুরা জানি সাকুল্যে দুই-তিনখানা। তালগোল পাকিয়ে না ফেলি- আমার বুকের ভিতরে ঢিপ ঢিপ করে কাঁপছে।
হুজুর এসে আসন গ্রহণ করলেন তার সাগরেদদের নিয়ে। বেগানা কোন পুরুষ কোন নারীকে বাইয়্যাত দিতে পারে না নাকি। কিন্তু আমাকে নাকি অলরেডি উকিল বাপের তকমা দিয়ে জায়েজ করে নিয়েছে।
শালার কি এক তেলেসমাতি- প্রেমিক থেকে উকিল বাপ!! সেজন্যই ওরা এত রহস্য করেছে আমার সাথে। আগে জানলে আমি এই তল্লাটে থাকতাম না নিঃসন্দেহে। আমার বিব্রত চেহারা দেখে ববি হাসছে। বেশ একটা জব্দ করতে পেরে সে ভীষণ আহ্লাদিত!
হুজুরের জীবনেও হয়তো প্রথম কোন রুশ নারীকে নব্য ধর্মে দীক্ষিত করছেন-তাই তিনি বেশ উত্তেজিত। তিনি তার জীবনের সেরা বয়ান দিচ্ছেন। ববি যে কত মহান কাজ করেছে, আর তার সেরা বেহেশতখানা যে প্রায় কনফার্ম এই নিয়ে বহু হাদিস থেকে রেফারেন্স টানছেন তিনি। আর মেয়েটাও যে কত ভাগ্যবতী সে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে শুধু নিজেকে নয় তার স্বামী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও বেহেশতে যাবার পথ সুগম করে দিচ্ছে। তবে তার চ্যালারা চরম উৎসুক ঠারে ঠুরে এমন পুণ্যবতী নারীকে দেখার জন্য।
হুজুর কালেমা পড়ালেন- আমি সাধ্যমত এলিনাকে বুঝিয়ে দিলাম। আর এ ঘরের মানুষ এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল যে, কয়েক প্রজন্ম ধরে এই গল্প চলতে থাকবে সেটা নিশ্চিত।
এলিনা নব-ধর্মে দীক্ষিত হবার পরে শুরু হোল ম্যারাথন মোনাজাত। আমি আগে থেকেই এলিনাকে বলে দিয়েছিলাম, সে সবার সাথে সুর মিলিয়ে শুধু ‘আমিন’বলবে। ‘আমেন’ শব্দের সাথে সে আগে থেকেই পরিচিত-এ’ কার কে শুধু ই’ করে দিবে।
মোনাজাতের পরে আবার নাকি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে। এলিনার কথা কি বলব আমি নিজেই শেষবার নামাজ কবে পড়েছি ভুলে গেছি। ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের উপর ভর করে পা ভাঁজ করে কোনদিন বসতেই পারিনি। এখন খেলা হবে আমাকে ইমামতি’তে দাড় করিয়ে দিলে। বেইজ্জতের ষোলকলা পূর্ণ হয়।
মহিলারা অন্যরুমে নামাজ পড়ল –তাই আমার দেখা হয়নি এলিনার বিব্রতকর অবস্থা! কিন্তু আমার অবস্থাও তথৈবচ! আমার পাশে ববি দাঁড়াল- ও শালা দেখি আরো এক কাঠি সরেস! নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় মনে হচ্ছিল শালাকে লাথি মেরে ফেলে দেই।
শালা আমাকে উকিল বাপ বানিয়েছে !!!!

পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
~প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:২৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×